
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট
বিদ্যালয়ের মেঝেতে বসে সাদা কাগজে রঙিন পেনসিলে পৃথিবী, ইটভাটা, গাছ, শুকনো মাঠসহ জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব ফুটিয়ে তুলছে শিশুরা। আঁকা শেষ হলে নিজের ছবিতে দেখা ক্ষতির দিকগুলো বর্ণনাও করছে তারা। রামপাল উপজেলার ফয়লাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমনই ব্যতিক্রমী দৃশ্যের দেখা মেলে। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি নাচ, গান ও কবিতা পাঠেও অংশ নেয় শিশুরা।
এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নাল নেটওয়ার্ক ফর আর্লি চাইল্ডহুড (আরনেক), কোডেকের স্বপ্নযাত্রা প্রকল্প ও বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের আয়োজনে দিনব্যাপী “চিলড্রেনস ভয়েস অন ক্লাইমেট চেঞ্জ” শীর্ষক এই ক্যাম্পেইনে ৩ থেকে ৮ বছর বয়সী মোট ৮০ জন শিশু অংশগ্রহণ করে। ব্যতিক্রমী এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে শিশু ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রারম্ভিক শৈশব উন্নয়ন নিয়ে এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শিশু কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ স্কাউটস বাগেরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক শাকির হোসেন ও কোডেকের ফোকাল পার্সন মাহবুবুর রহমান সুজন।
এডভোকেসি সভায় শিশু ও তাদের অভিভাবকরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যা তুলে ধরেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌসি স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধানে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আপনারা যে সমস্যাগুলোর কথা বলেছেন, বিশেষ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাজুক কাঠের পোলটির কথা—আমি নিজে গিয়ে পরিদর্শন করব। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি শিশুদের মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রভাবিত করে। এসব ক্ষতি কমাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
এ সময় চিত্রাঙ্কনে অংশ নেওয়া শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী নূহা আক্তার বলে, “গরম আর ধোঁয়ার কারণে গাছপালা নষ্ট হয়—এটা আমি ছবিতে এঁকেছি। আমি চাই আমাদের এলাকা সবুজ থাকুক। সবাই যেন গাছ কাটা কমায়।”
অভিভাবক সোহেলী বেগম বলেন, “এমন আয়োজন আমাদের সন্তানদের সচেতন করে। আমরা বড়রা যেভাবে পরিবেশ নষ্ট করছি, তার প্রভাব তাদের ওপরই বেশি পড়ে। শিশুরা নিজেরাই যখন এসব শিখছে, তখন আমরাও সচেতন হতে পারছি।”
কার্যক্রম শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনে শিশুদের আঁকা ছবির প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের সুরক্ষায় পরিবার, বিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সকলকে যৌথভাবে এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।